Wednesday, May 24, 2006

রবীন্দ্রনাথের মুখ

রবীন্দ্রনাথের মুখ
- কমলেশ পাল

দশ বছরের ছেলে টুকুন একটা কাগজে পেন্সিলের হিজিবিজি কেটে
বলল: দেখুন, রবীন্দ্রনাথের মুখ এঁকেছি৷ হয়নি?
দেখলাম৷ খাদা নাক, কুতকুতে চোখ, ছুঁচালো দাড়ি, আর
জঙ্গুলে চুলের এক বিচিত্রিত তুলকালাম কাণ্ডকারখানা৷
বললাম : বা:, চমত্কার৷
টুকুন খুশি হয়ে চলে গেল৷

টুকুন রবীন্দ্রনাথের মুখ আঁকতে পারেনি৷
আসলে, রবীন্দ্রনাথের মুখ আঁকা সহজ নয়৷
আঁকতে হলে চাই -
এক-আকাশ-উপুড়-করা মানুষের জন্যে ভালোবাসা৷
চাই একটা বৈশাখী ঝড়ের মতো খ্যাপা বাইসন
যে দিগন্তের এক প্রান্ত থেকে
অন্য প্রান্তে ছুটে যায় চিরতে চিরতে -
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেই ঘাড়-কাত্-করা জেদ৷

রবীন্দ্রনাথের মুখ আঁকতে হলে চাই -
এক সাগর তৃষ্ঞা, এক টগর তৃপ্তি;
সমস্ত পাখির মুক্তি, সমস্ত গৃহের বন্ধন;
মায়ের যে মমতা শিশুর মুখের উপর জ্যোত্স্নার মতো ঝরে পড়ে;
শিশুর যে আনন্দ লুকিয়ে থাকে তার বাঁশি আর বেলুনের ভিতরে;
তুলির সেই ঘরছাড়া টান
যা বোলপুরের খোয়াই পেরিয়ে চলে যায়
আফ্রিকার নিবিড় রহস্যে;
সেই সব রঙ
যা দিয়ে সাগরকন্যারা ঝিনুকের বুকে ফুটিয়ে তোলে প্রজাপতি৷

সোজা কথা!
টুকুন এ সমস্ত পাবে কোথায়?
একজন শাশ্বত মানুষের মুখ একটা ছবির মধ্যে আঁটেই না৷
একজন শাশ্বত মানুষের মুখ -
যার ঠোঁট থেকে
পশুত্বের বিরুদ্ধে ছুটে যাচ্ছে
মৃত্যুকামী বারুদের গোলা;
আর একই সঙ্গে ঝরে পড়ছে
মানুষের জন্য অন্তহীন জীবন সঙ্গীত ৷৷৷৷৷৷৷৷

রবীন্দ্রনাথের মুখ আঁকা কি সোজা কথা!

1 comment:

Unknown said...

কবিতাটি কি এখানেই শেষ? মনে হয় আরো বড়ো এটি ।পুরোটা পেলে বাধিত হবো।